• বৃহস্পতি. জুলাই 17th, 2025

হাউসফুল ৫: হাসির আড়ালে যন্ত্রণার আধিক্য

Byনজরুল ইসলাম

জুন 13, 2025

‘যত মানুষ, তত আনন্দ’—এই প্রবাদটি বহুবার শোনা গেছে। তবে বলিউডের বহুপর্বের হাস্যরসাত্মক ফ্র্যাঞ্চাইজি হাউসফুল ৫-এর ক্ষেত্রে এটি যেন উল্টো—এখানে “যত বেশি, তত যন্ত্রণাদায়ক”। বারবার ফিরে আসা তোতাপাখির সেই দুর্বোধ্য রসিকতা এখনও তেমনই বিরক্তিকর ও রসহীন। একইভাবে অক্ষয় কুমার ও বানরের কৃত্রিম চড়-চাপড় বিনিময় দৃশ্যও হাসির পরিবর্তে বিরক্তিই বাড়ায়।

তবে সবচেয়ে অপ্রীতিকর দিক হলো, বারবার নারীর শরীর নিয়ে কৌতুক করার প্রবণতা, যা একঘেয়ে ও লজ্জাজনক। হাসানোর চেয়ে বিব্রত করে বেশি।

এইবারের গল্পে সেই পরিচিত বোকাসোকা পুরুষদের দলটি উঠে পড়ে একটি ক্রুজে, যেখানে এক রহস্যজনক খুনি ঘোরাফেরা করছে। মুখে সিলভার রঙের স্কুইড গেমের মতো মাস্ক, আর তার কার্যকলাপ ভয়াবহ ‘স্ক্রিম’ সিরিজের খুনিদের মতো। শুধুমাত্র এই কারণে সম্ভবত হাউসফুল ৫-এর পোস্টারে রক্তাক্ত হরর-ফন্টের ব্যবহার। কিন্তু প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা, যিনি এবার গল্প ও চিত্রনাট্যও লিখেছেন, মাঝেমধ্যে এই খুনির বিষয়টি একেবারেই ভুলে যান, আর ছবিটিও অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ হয়ে ওঠে।

গল্পটি ঘোরে “আসল জলি” কে, সেই প্রশ্ন ঘিরে। কে আসল উত্তরাধিকারী: অক্ষয় কুমারের জুলিয়াস, রিতেশ দেশমুখের জল্লাবুদ্দিন না অভিষেক বচ্চনের জলভূষণ? তিনজনই তাদের সঙ্গিনীদের (নারগিস ফাখরি, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ ও সোনম বাজওয়া) নিয়ে ক্রুজে ওঠেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় প্রতারণা, মিথ্যাচার আর পুরনো ধাঁচের হাস্যকর কাণ্ডকারখানা।

পরে যুক্ত হন ফরদীন খান, জনি লিভার, চাঙ্কি পাণ্ডে, শ্রেয়াস তালপাড়ে, দিনো মোরিয়া, সঞ্জয় দত্ত, জ্যাকি শ্রফ এবং দ্বিতীয়ার্ধে নানা পাটেকার। কিন্তু যত অভিনেতা যুক্ত হন, পরিচালক তরুণ মানসুখানির পক্ষে কাহিনীকে গতি দিয়ে রাখা ততটাই কঠিন হয়ে পড়ে।

পরিচিত ও বহুবার ব্যবহৃত ঠাট্টাগুলি থেমে থেমে আসে, আর গান—অতিরিক্ত সংখ্যায়, যেগুলো দেখতে ও শুনতে প্রায় একরকম। এক সময় বোঝা যায়, শুধু ক্রুজ নয়, গল্পটাও যেন গভীর সমুদ্রে পথ হারিয়েছে। মৃতদেহের সংখ্যা বাড়লেও, হাসির পরিমাণ তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

অবশেষে যখন সিনেমা ঘুরে দাঁড়ায় ‘খুনিকে খুঁজে বের করো’ ধাঁচে, তখন পাটেকারের ধুতি-পরা, তিলক লাগানো লন্ডনের ইন্টারপোল অফিসার চরিত্র সামনে আসে। কিন্তু তখন পর্যন্ত সিনেমাটি নিজেই উদ্ধারযোগ্যতার বাইরে চলে গেছে।

অক্ষয় কুমার তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সহনীয়, কারণ তিনি তার অভিনয়কে কিছুটা সংযত রেখেছেন। তবে রিতেশ দেশমুখ ও অভিষেক বচ্চনের চরিত্রে বলার মতো কিছুই দেওয়া হয়নি, যার ফলে দর্শকদের মনে তারা তেমন দাগ কাটতে পারেন না।