• শুক্ৰ. ডিচে 5th, 2025

৩৬ বছর পর ন্যায়বিচার: সিউল অলিম্পিকের বিতর্কিত স্বর্ণপদক রয় জোন্সকে ফিরিয়ে দিলেন পার্ক সি-হুন

Byপালক বেগম

ছেপ্টে 5, 2025

প্রায় ৩৬ বছর ধরে অলিম্পিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতর্কগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত ঘটনার অবশেষে একটি সম্মানজনক এবং আবেগঘন পরিসমাপ্তি ঘটলো। ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে বক্সিংয়ের লাইট-মিডলওয়েট বিভাগের ফাইনালে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে স্বর্ণপদক জয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক সি-হুন অবশেষে সেই পদকটি এর প্রকৃত দাবিদার, আমেরিকান বক্সিং কিংবদন্তি রয় জোন্স জুনিয়রের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই ঘটনাটি দেরিতে জনসমক্ষে এলেও ক্রীড়াবিশ্বে তা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ

ঘটনাটি সম্প্রতি আলোচনায় আসে যখন রয় জোন্স জুনিয়র তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও এবং ছবি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, “১৯৮৮ সালে, বক্সিং ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিতর্কগুলোর একটিতে আমার স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায়, যে ব্যক্তি পদকটি জিতেছিলেন (পার্ক সি-হুন), তিনি কোরিয়া থেকে আমার বাড়িতে এসে পদকটি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘এটা আসলে তোমারই ছিল’।” এই পোস্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এক আবেগঘন পুনর্মিলন

রয় জোন্স জুনিয়রের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, পার্ক সি-হুন তার ছেলেকে নিয়ে জোন্সের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন। শুরুতে পার্ককে কিছুটা চিন্তিত মনে হলেও, জোন্সকে দেখামাত্রই তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। পার্ক বলেন, “আমি রিংয়ে আপনার জন্য ৩৬ বছর অপেক্ষা করেছি। এটি ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকের স্বর্ণপদক। সিউলে, নিজের দেশের মাটিতে আমি এই পদকটি জিতেছিলাম। কিন্তু এখন আমি জানি যে সেটি ভুল ছিল, এবং আজ আমি রয় জোন্স জুনিয়রের নিজের বাড়িতে এসে এই পদকটি তাকে হস্তান্তর করছি।” এই কথা শুনে রয় জোন্স জুনিয়র আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং পদকটি হাতে নিয়ে নিজের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে শুধু “অবিশ্বাস্য” (Crazy) শব্দটি উচ্চারণ করতে পারেন।

১৯৮৮ সালের বিতর্কিত ফাইনাল

১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকের পর্দা নামার ঠিক আগে অনুষ্ঠিত বক্সিংয়ের লাইট-মিডলওয়েট বিভাগের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক সি-হুন এবং আমেরিকার উদীয়মান তারকা রয় জোন্স জুনিয়র। ম্যাচে জোন্স একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেন এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিনি ৮৬টি সফল ঘুষি মারেন, যেখানে পার্কের সফল ঘুষির সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিচারকদের ৩-২ বিভক্ত রায়ে পার্ককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তটি অলিম্পিক বক্সিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিচার (হোম অ্যাডভান্টেজ) হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করে। এই রায়ের ফলে জড়িত তিনজন বিচারককে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে দুজনকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এবং বক্সিংয়ের স্কোরিং পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়।

দুই বক্সারের ভিন্ন পথ

সিউল অলিম্পিকের পর দুই বক্সারের জীবন দুটি ভিন্ন পথে চালিত হয়। রয় জোন্স জুনিয়র পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান এবং কয়েক দশকের দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারে নিজেকে বক্সিং ইতিহাসের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি বক্সিংয়ের ‘হল অফ ফেম’-এও জায়গা করে নেন। অন্যদিকে, বিতর্কিত সেই জয়ের গ্লানি পার্ক সি-হুনকে সারাজীবন তাড়া করে বেড়িয়েছে। তিনি পেশাদার বক্সিংয়ে না গিয়ে অবসর গ্রহণ করেন এবং কোচিংয়ের সাথে যুক্ত হন। তার জীবনের এই ঘটনাটি নিয়ে ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘কাউন্ট’ (Count) নামে একটি চলচ্চিত্রও মুক্তি পায়, যা তার কাহিনীকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে। ৩৬ বছর পর হলেও, পার্ক সি-হুনের এই পদক্ষেপটি ক্রীড়াসুলভ মনোভাবের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।