• শুক্ৰ. ডিচে 5th, 2025

প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আয় পিএন্ডজি’র, শুল্ক কমার ইঙ্গিতে শেয়ারের দরে উল্লম্ফন

Byফাহিম হোসেন

অক্টো 24, 2025

ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী বৈশ্বিক জায়ান্ট প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পিএন্ডজি) তাদের চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিকূল ভোক্তা পরিবেশ এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির সৌন্দর্য এবং গ্রুমিং পণ্যের বর্ধিত চাহিদা এই আয়ে সহায়তা করেছে। এই ইতিবাচক খবরের পাশাপাশি শুল্কের খরচ কমার পূর্বাভাস দেওয়ায় কোম্পানির শেয়ারের দরেও শুক্রবার উল্লম্ফন দেখা গেছে।

আর্থিক ফলাফল

এলএসইজি (LSEG) কর্তৃক জরিপকৃত বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া প্রান্তিকে কোম্পানির পারফরম্যান্স ছিল নিম্নরূপ:

  • শেয়ার প্রতি আয় (EPS): ১.৯৯ ডলার (সমন্বিত), যেখানে প্রত্যাশা ছিল ১.৯০ ডলার।

  • রাজস্ব: ২২.৩৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে প্রত্যাশা ছিল ২২.১৮ বিলিয়ন ডলার।

পিএন্ডজি এই প্রান্তিকে ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার নীট আয় করেছে (শেয়ার প্রতি ১.৯৫ ডলার), যা গত বছরের একই সময়ের ৩.৯৬ বিলিয়ন ডলার (শেয়ার প্রতি ১.৬১ ডলার) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। কোম্পানির নীট বিক্রয় ৩% বৃদ্ধি পেয়ে ২২.৩৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ার বাজার ও শুল্ক পরিস্থিতি

কোম্পানির এই শক্তিশালী ফলাফলের পর শুক্রবার প্রি-মার্কেট ট্রেডিংয়ে পিএন্ডজি’র শেয়ারের দাম ০.৬% বৃদ্ধি পায়। বিনিয়োগকারীদের এই আশাবাদের পেছনে শুধু আয়ের প্রতিবেদনই নয়, শুল্ক সংক্রান্ত ইতিবাচক খবরও রয়েছে। পিএন্ডজি ২০২৬ অর্থবছরের জন্য তাদের আনুমানিক শুল্ক ব্যয়ের পূর্বাভাস কমিয়েছে। এই খবরটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে, কারণ প্যাম্পারস, জিলেট এবং টাইডের মতো ব্র্যান্ডের এই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটি শুল্কের অনিশ্চয়তা নিয়ে চাপে ছিল।

দুই প্রান্তিকে রাজস্ব হ্রাসের পর, বিশ্লেষকরা আশা করছিলেন পিএন্ডজি’র বিক্রয় এই প্রান্তিকে ২% বাড়বে। ইউরোপীয় প্রতিযোগী ইউনিলিভারের (Unilever) ভালো আয়ের খবরও পিএন্ডজি’র প্রতি বাজারের মনোভাবকে ‘বিয়ারিশ’ (নিম্নমুখী) থেকে ‘বুলিশ’ (ঊর্ধ্বমুখী) করতে সহায়তা করেছে।

চাহিদার মিশ্র চিত্র

রাজস্ব বাড়লেও, পিএন্ডজি’র পণ্যের সামগ্রিক বিক্রয়ের পরিমাণ (ভলিউম) গত বছরের তুলনায় স্থির ছিল (০%)। বিক্রয়ের পরিমাণ থেকে মূল্যবৃদ্ধি বাদ দেওয়া হয়, তাই এটি চাহিদার একটি সঠিক চিত্র দেয়। অনেক ভোগ্যপণ্য কোম্পানির মতো পিএন্ডজি’ও দেখছে যে মূল্যস্ফীতিতে ক্লান্ত ভোক্তারা সাশ্রয়ী পণ্য খুঁজছেন, যার ফলে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে পণ্যের চাহিদা কমেছে।

ভোক্তাদের ‘কে-আকৃতির’ আচরণ

পিএন্ডজি’র প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) আন্দ্রে শুল্টেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, “ভোক্তা পরিবেশ খুব ভালো না হলেও স্থিতিশীল।” তিনি উল্লেখ করেন যে আয়ের ভিত্তিতে ভোক্তাদের কেনাকাটার ধরনে একটি স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে, যাকে প্রায়শই “কে-আকৃতির” অর্থনীতি বলা হয়।

শুল্টেন বলেন, উচ্চ আয়ের ক্রেতারা, যাদের অর্থের অভাব নেই, তারা ডিসকাউন্ট ক্লাব বা অনলাইন থেকে বড় প্যাক (bulk size) কিনছেন এবং এভাবেই তারা ভ্যালু খুঁজছেন।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের ভোক্তারা, যারা প্রতি মাসের বেতনের উপর নির্ভর করে চলেন, তারা তাদের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য প্রতিটি পণ্য শেষ বিন্দু পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। যেমন, তারা ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পুর বোতলের শেষ ফোঁটা পর্যন্ত ব্যবহার করছেন এবং ঘরের জিনিসপত্র পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন কিছু কিনছেন না।

পিএন্ডজি’র কৌশলগত সাফল্য

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, অর্থনৈতিক মন্দার সময়ের সাধারণ প্রবণতার বিপরীতে, সাশ্রয়ী মূল্যের ‘প্রাইভেট লেবেল’ (যা সাধারণত সুপারমার্কেটগুলো নিজেদের ব্র্যান্ডে বিক্রি করে) ব্র্যান্ডগুলো এবার বাজার হারাচ্ছে। পিএন্ডজি’র কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালের মন্দার পর কোম্পানি তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। তারা আরও প্রিমিয়াম পণ্য তৈরিতে মনোযোগ দেয়, যেগুলোর বিকল্প হিসেবে সহজে সস্তা প্রাইভেট লেবেল পণ্য কেনা যায় না। কোম্পানির এই দীর্ঘমেয়াদী কৌশলটিই এখন সফলতার মুখ দেখছে বলে মনে করা হচ্ছে।