স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের ব্যাটারি ও ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রযুক্তি দুনিয়ায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ডিভাইসের ব্যাটারি পারফরম্যান্স ঠিক রাখা এবং অ্যান্ড্রয়েডের নতুন হটস্পট প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর বিষয়টি। ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে এই দুটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ব্যাটারির আচমকা চার্জ কমে যাওয়া ও সমাধান
অনেকেই খেয়াল করেছেন যে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা নোটবুকের ব্যাটারির চার্জ হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। হয়তো দেখছিলেন ৪০ শতাংশ চার্জ আছে, মুহূর্তের মধ্যেই তা ১০ শতাংশে নেমে এলো। মূলত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির কার্যক্ষমতা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, যা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ডিভাইসের ভেতরের ইলেকট্রো-কেমিক্যাল প্রসেস বা রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো ব্যাটারির ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে অনেক সময় ডিভাইসটি ব্যাটারির প্রকৃত সক্ষমতা বা ‘ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি’ সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানে ডিভাইসের ব্যাটারি নতুন করে ‘ক্যালিব্রেট’ বা সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়।
আইফোন, আইপ্যাড কিংবা অ্যান্ড্রয়েড—সব ধরনের ডিভাইসেই ক্যালিব্রেশনের নিয়ম মোটামুটি একই। প্রথমে ডিভাইসটি ব্যবহার করে ব্যাটারি এমনভাবে শেষ করতে হবে যেন সেটি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। সম্ভব হলে ডিভাইসটি আবার চালু করার চেষ্টা করতে হবে এবং পুরোপুরি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ফোন বা ল্যাপটপটি বন্ধ থাকা অবস্থায় চার্জে দিয়ে একটানা ১০০ শতাংশ পূর্ণ করতে হবে। চার্জ পূর্ণ হলে চার্জার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ডিভাইসটি চালু করলেই ক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
তবে আধুনিক স্মার্টফোনগুলোতে ব্যাটারি সুরক্ষার জন্য চার্জিং লিমিট দেওয়া থাকে। অ্যান্ড্রয়েড ১৫ ও আইওএস ১৪ বা পরবর্তী সংস্করণগুলোতে ৮০ শতাংশ চার্জ হওয়ার পর বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফিচার রয়েছে। আইফোনে এটি ‘অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং’ এবং অ্যান্ড্রয়েডে ‘লিমিট ফর চার্জিং’ নামে পরিচিত। ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার সময় সেটিংস থেকে সাময়িকভাবে এই অপশনটি বন্ধ করে নিতে হবে। অবশ্য কিছু কিছু স্মার্টফোন মডেল এই লিমিট চালু থাকলেও মাঝেমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০০ শতাংশ চার্জ নিয়ে নিজেই ক্যালিব্রেশনের কাজটি সেরে নেয়।
অ্যান্ড্রয়েড হটস্পটে আসছে বড় পরিবর্তন
ব্যাটারির স্থায়িত্বের পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রেও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর রয়েছে। গুগল তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে হটস্পট ফিচারে বড় ধরনের আপগ্রেড নিয়ে আসছে, যা মোবাইল ডেটা শেয়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা বদলে দেবে। নতুন এই আপগ্রেডে পিক্সেল সিরিজের ফোনগুলোতে প্রথমবারের মতো ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ড ব্যবহারের সুবিধা যুক্ত হচ্ছে। ওয়াই-ফাই ৬ই এবং ওয়াই-ফাই ৭ সমর্থিত ডিভাইসগুলোতে এই প্রযুক্তিটি আগে থেকেই ছিল, তবে হটস্পটের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নতুন।
এতদিন পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড হটস্পট শুধুমাত্র ২.৪ গিগাহার্টজ এবং ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করত। ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে চ্যানেলগুলো অনেক প্রশস্ত হওয়ায় ডেটা চলাচলের জন্য বেশি জায়গা পাওয়া যায়। ফলে গেমিং, হাই-ডেফিনিশন ভিডিও স্ট্রিমিং কিংবা ভারী অফিসের কাজ করার সময় ইন্টারনেট স্পিড উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। আমেরিকা ও জার্মানির মতো দেশগুলোতে ফ্রিকোয়েন্সি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় গুগল এই ফিচারটি উন্মুক্ত করতে শুরু করেছে। তবে ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের একটি সীমাবদ্ধতা হলো এটি খুব অল্প দূরত্বের মধ্যে কাজ করে এবং পুরনো ডিভাইসগুলো এই তরঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।
হাইব্রিড মোড ও সক্রিয় করার উপায়
পুরনো ও নতুন ডিভাইসের মধ্যে সমন্বয় করতে গুগল একটি ‘হাইব্রিড মোড’ চালু করছে। এই প্রযুক্তিতে ২.৪ গিগাহার্টজ এবং ৬ গিগাহার্টজ—উভয় ব্যান্ডই একসঙ্গে কাজ করবে। এর ফলে আধুনিক স্মার্টফোনগুলো সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা পাবে, আবার পুরনো ট্যাবলেট বা ল্যাপটপগুলো ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়েই কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এতে করে অন্য ওয়াই-ফাই সিগন্যালের কারণে তৈরি হওয়া প্রতিবন্ধকতা বা ‘ইন্টারফিয়ারেন্স’ কমে আসবে এবং ডাউনলোড স্পিড বাড়বে।
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই এই ফিচারটি চালু করতে পারবেন। নির্দিষ্ট কিছু মডেলে ‘সেটিংস’ থেকে ‘নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইন্টারনেট’ অপশনে গিয়ে ‘হটস্পট অ্যান্ড টেদারিং’ নির্বাচন করতে হবে। সেখান থেকে ‘ওয়াই-ফাই হটস্পট’ এবং পরবর্তীতে ‘স্পিড অ্যান্ড কম্প্যাটিবিলিটি’ মেনুতে গেলে ৬ গিগাহার্টজ এবং হাইব্রিড মোড (২.৪ ও ৬ গিগাহার্টজ) নির্বাচনের সুযোগ পাওয়া যাবে। প্রযুক্তিটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং নির্বাচিত কিছু ডিভাইসেই আপাতত এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।